%20(1).webp) |
Block Chain Technology in Bangla |
ব্লক চেইন প্রযুক্তি কি: ভাবুন, আপনার কাছে একটি ডিজিটাল খাতা (লেজার) আছে যেটা সবার জন্য খোলা থাকবে কিন্তু কেউ কোনো তথ্য বদলাতে বা চুরি করতে পারবে না এটিই ব্লকচেইন। এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যা ডেটাকে নিরাপদ ও স্বচ্ছ উপায়ে সংরক্ষণ করে ।
আজকে এই লেখাতে আমি আপনাদের ব্লক চেইন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানাবো।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি? - What is Block Chain Technology in Bengali
ব্লকচেইন শব্দটি দুটি অংশ নিয়ে তৈরী: ব্লক এবং চেইন।
ব্লক: প্রতিটি ব্লকে কিছু ডেটা বা লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
চেইন: এই ব্লকগুলি ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতিতে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে, যা একটি চেইনের মতো দেখতে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি হল একটি বিশেষ ধরনের ডেটাবেস সিস্টেম, যা ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং আদান-প্রদানের জন্য ব্যাবহার করা হয়।
ব্লকচেইন হল একটি ডিজিটাল খাতা (লেজার), যেখানে লেনদেনের সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু এটি সাধারণ খাতার মতো নয়, এটি ব্লক চেইন কত প্রকার ও কি কি? অনেক কম্পিউটারে ছড়িয়ে থাকে, তাই একক ব্যক্তি বা সংস্থা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
ব্লকচেইন শুধুমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন বিটকয়েন) এর জন্যই নয়, বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
ব্লক চেইন কত প্রকার ও কি কি? - Types Of Block Chain
ব্লক চেইন চার ধরনের হয় যথা,
পাবলিক: বিটকয়েন লেনদেন।
প্রাইভেট: ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন।
হাইব্রিড: হাসপাতালের রোগীর তথ্য সংরক্ষণ।
কনসোর্টিয়াম: বিভিন্ন ব্যাংকের লেনদেন যাচাই করা।
পাবলিক ব্লকচেইন কাকে বলে? - What is Public Block Chain in Bangla
পাবলিক ব্লকচেইন হলো একটি ডিজিটাল খাতা বা লেজার যেখানে যে কেউ অংশ নিতে পারে, তথ্য দেখতে পারে এবং লেনদেন নিশ্চিত করতে পারে। এটি একেবারে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ একটি প্রযুক্তি, যেখানে কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে না।
প্রাইভেট ব্লকচেইন কাকে বলে?- What is Private Block Chain in Bangla
এমন একটি ব্লকচেইন ব্যবস্থা, যেখানে কেবল কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই অংশ নিতে পারে এবং লেনদেন বা তথ্য দেখতে পারে। এটি পাবলিক ব্লকচেইনের বিপরীত, যেখানে যে কেউ নেটওয়ার্কে যোগ দিতে পারে এবং লেনদেন দেখতে পারে না ।
হাইব্রিড ব্লকচেইন কাকে বলে?- What is Hybrid Block Chain in Bangla
হাইব্রিড ব্লকচেইন হল পাবলিক ও প্রাইভেট ব্লকচেইনের সংমিশ্রণ। এখানে কিছু তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত (পাবলিক) রাখা হয়, আবার কিছু তথ্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত (প্রাইভেট) থাকে।
কনসোর্টিয়াম ব্লকচেইন What is Consortium Block Chain in Bangla
কনসোর্টিয়াম ব্লকচেইন হল একটি প্রাইভেট ব্লকচেইন যা একাধিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা মিলে পরিচালনা করে। এটি সম্পূর্ণ পাবলিক নয় এবং এখানে কোনো একক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখে না, বরং সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে?
ব্লকচেইন একটি ডিজিটাল খাতার মতো কাজ করে, যেখানে প্রতিটি লেনদেন বা ডেটা ব্লক আকারে সংরক্ষণ করা হয় এবং এই ব্লকগুলি একটি চেইনের মতো একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে।
ব্লকচেইন কাজ করার প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়।
১. লেনদেন তৈরি
যখন কোনো লেনদেন বা ডেটা তৈরি হয় যেমন: A ব্যক্তি B ব্যক্তিকে টাকা পাঠায়, তখন তা একটি ব্লকে সংরক্ষণ করা হয়।
২. ব্লক তৈরি
লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে একটি ব্লক তৈরি করা হয়। প্রতিটি ব্লকে একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ অর্থাৎ একটি অনন্য কোড থাকে, যা ব্লকটিকে সুরক্ষিত করে রাখে।
৩. ব্লক যাচাই
ব্লকটি তৈরি হওয়ার পর, নেটওয়ার্কের অন্যান্য কম্পিউটার বা নোড দ্বারা এটি যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে কনসেনসাস মেকানিজম (Consensus Mechanism) বলা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় কনসেনসাস মেকানিজম হল প্রুফ অফ ওয়ার্ক (Proof of Work)।
৪. চেইনে যুক্ত
ব্লকটি যাচাই হয়ে গেলে পূর্বের ব্লকগুলির সাথে যুক্ত হয়ে একটি চেইন তৈরি করে। প্রতিটি ব্লক পূর্বের ব্লকের হ্যাশ ধারণ করে, যা চেইনকে অপরিবর্তনীয় করে তোলে।
৫. সুরক্ষিত লেজার
একবার ব্লক চেইনে যুক্ত হলে, তা পরিবর্তন করা অসম্ভব হয়ে যায়। এই কারণে ব্লকচেইন একটি সুরক্ষিত এবং বিশ্বস্ত লেজার হিসেবে কাজ করে।
ব্লকচেইন ডেভেলপার কি?-What is Block Chain Developer in Bengali
ব্লকচেইন ডেভেলপার হলেন একজন প্রোগ্রামার যিনি ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফটওয়্যার তৈরি করেন। সহজভাবে বললে, ব্লকচেইন ডেভেলপাররা এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে যা কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নিরাপদভাবে তথ্য সংরক্ষণ ও লেনদেন করতে পরে।
ব্লকচেইন ডেভেলপারের কাজ কী
একজন ব্লকচেইন ডেভেলপারের কাজ গুলি হলো,
1. নতুন ব্লকচেইন তৈরি করা – যেকোনো নতুন ব্লকচেইন সিস্টেম তৈরি বা পুরোনো সিস্টেম উন্নত করা।
2. স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট তৈরি করা – এটি এমন এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় চুক্তি, যা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে নিজে থেকেই কার্যকর হয়।
3. ডিসেন্ট্রালাইজড অ্যাপ (DApp) তৈরি করা – এমন অ্যাপ বানানো যা কোনো একক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
4. ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করা – নতুন ডিজিটাল মুদ্রা (যেমন বিটকয়েন বা ইথেরিয়াম) তৈরি করা।
5. নিরাপত্তা নিশ্চিত করা – ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ডাটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তা বজায় রাখা।
ব্লকচেইনের ৫টি বৈশিষ্ট্য কী? - 5 Block Chain Features
ব্লকচেইনের ৫টি বৈশিষ্ট্য গুলি হলো -
১. অপরিবর্তনীয় (Immutable): একবার কোনো তথ্য ব্লকচেইনে লেখা হলে অর্থাৎ লেন দেনর তথ্য যুক্ত হলে সেটা আর বদলানো বা মোছা যায় না।
2. বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralized): এই তথ্য বা ব্লক চেইন এক জায়গায় থাকে না, বরং অনেক কম্পিউটারে ভাগ হয়ে সংরক্ষণ করা হয়। তাই কেউ একা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
3. স্বচ্ছতা (Transparency): লেনদেনের সব তথ্য সবাই দেখতে পারে, কিন্তু কে লেনদেন করছে, সেটা গোপন থাকে।
4. নিরাপত্তা (Secure): ব্লকচেইনে শক্তিশালী গাণিতিক পদ্ধতি (ক্রিপ্টোগ্রাফি) ব্যবহার করা হয়, যা এটিকে হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে।
5. ঐকমত্য (Consensus): কোনো লেনদেন বৈধ কিনা, সেটা ঠিক করতে নেটওয়ার্কের অনেক গুলি কম্পিউটার একসঙ্গে সম্মতি দেয়।
ব্লক চেইন নোড কি? - What is Block Chain Node
ব্লকচেইন নোড হল একটি কম্পিউটার বা ডিভাইস যা ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করে।
এটি ব্লকচেইনের তথ্য সংরক্ষণ (store), যাচাই (validate) এবং বিতরণ (propagate) করে। সহজভাবে বললে, ব্লকচেইনের প্রতিটি নোড একটি ছোট সার্ভারের মতো কাজ করে যা পুরো নেটওয়ার্ককে নিরাপদ ও স্বচ্ছ রাখে।
ব্লকচেইন নোড কত প্রকার ও কি কি? - Type Of Block Chain Node
চার ধরনের ব্লকচেইন নোড আছে,
১. ফুল নোড (Full Node)
২. লাইট নোড (Light Node বা SPV Node - Simplified Payment Verification Node)
৩. মাইনিং নোড (Mining Node)
৪. মাস্টার নোড (Masternode)
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? - What is Crypto Currency in Bangla
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এক ধরনের ডিজিটাল টাকা, যা শুধু ইন্টারনেট মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়।
এটি কোনো সরকার বা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং বিশেষ প্রযুক্তি (ক্রিপ্টোগ্রাফি) ব্যবহার করে নিরাপদ রাখা হয়।
এই টাকায় লেনদেন করতে ব্যাংকের দরকার হয় না। সরাসরি একজন থেকে আরেকজনের কাছে টাকা পাঠানো যায়। প্রতিটি লেনদেনের হিসাব অনলাইনে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে কেউ জালিয়াতি করতে না পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখার জন্য ডিজিটাল ওয়ালেট (একটি বিশেষ অ্যাপ বা সফটওয়্যার) ব্যবহার করা হয়। Bitcoin, Ethereum-এর মতো কিছু জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে।
এথেরিয়াম কী? - What is Ethereum
এথেরিয়াম একটি বিকেন্দ্রীকৃত (Decentralized) সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি।
এটি মূলত দুটি কারণে জনপ্রিয় –
প্রথমত, এটি একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি (Ethereum - ETH), যা লেনদেন ও বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়;
দ্বিতীয়ত, এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ব্লকচেইন ভিত্তিক অ্যাপ (DApps) ও স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (Smart Contracts) তৈরি করা যায়।
ডিসেন্ট্রালাইজড (Decentralized) মানে কী?
ডিসেন্ট্রালাইজড অর্থ হলো এমন একটা ব্যবস্থা বা সিস্টেম, যেখানে ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ কোনো এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকে না, বরং তা অনেক মানুষের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যদি কোনো কিছু একজায়গায় কেন্দ্রীভূত (Centralized) না থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকে, তাহলে সেটাকে ডিসেন্ট্রালাইজড বলা হয়।
উদাহরণ:
ব্যাংক ও লেনদেন:
সাধারণ ব্যাংকে সব লেনদেন একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে হয়।
কিন্তু বিটকয়েন ও ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে লেনদেন অনেক কম্পিউটারের মাধ্যমে হয়, তাই এটি বিকেন্দ্রীভূত।
ভারতের প্রথম ব্লক চেইন রাজ্য কোনটি?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভিন্নভাবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যাবহার করেছে—
- তেলেঙ্গানা: হায়দরাবাদে "ব্লকচেইন জেলা" তৈরি করে গবেষণা ও ব্যবসার কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
- ঝাড়খণ্ড: কৃষকদের বীজ বিতরণে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারকারী প্রথম রাজ্য, যা কৃষিক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে।
- আন্ধ্র প্রদেশ: জমির নথিপত্র ও পরিবহন ব্যবস্থায় ব্লকচেইন ব্যবহারকারী প্রথম দিকের রাজ্যগুলোর একটি।
সুতরাং, প্রথম ব্লকচেইন রাজ্য নির্ভর করে আপনি কোন দিক থেকে দেখছেন!
ব্লকচেইনের সুবিধা কি? - Advantage of Block Chain in Bangla
1. নিরাপদ লেনদেন: মধ্যস্থতাকারী যেমন ব্যাংক ছাড়াই সরাসরি লেনদেন করা যায়, তাই সময় ও খরচ কমে।
2. বিশ্বাসযোগ্য: যেহেতু একবার লেখা তথ্য কোনো ভাবেই বদলানো যায় না, তাই সবাই নিশ্চিন্তে এতে বিশ্বাস করতে পারে।
3. স্বচ্ছতা: লেনদেনের সমস্ত হিসাব সবার কাছে প্রকাশ্য থাকে, যা দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করে।
4. দ্রুত ও কার্যকর: অনেক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা অটোমেটিক ভবে করা যায়, তাই সময় বাঁচে।
5. নতুন ব্যবসার সুযোগ: ব্লকচেইন ব্যবহার করে নতুন ধরনের অ্যাপ ও সেবা তৈরি করা সম্ভব, যা মানুষের কাজে লাগে।
ব্লকচেইনের ওসুবিধা কি? - Disadvantage of Block Chain in Bangla
1. জটিলতা: প্রযুক্তিটি বোঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন, তাই ব্যবহার করা সহজ নয়।
2. ধীর গতি: অনেক লেনদেন একসঙ্গে হলে, ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক ধীর হয়ে যেতে পারে।
3. বিদ্যুৎ খরচ: ব্লকচেইন চালাতে প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি লাগে, যা বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে।
4. নিয়ন্ত্রণের অভাব: এটা কোনো একক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না থাকায়, সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করা কঠিন।
5. আইনগত জটিলতা: অনেক দেশে ব্লকচেইনের জন্য এখনো স্পষ্ট নিয়ম-কানুন তৈরি হয়নি, যা আইনি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
কীভাবে ব্লকচেইন ডেভেলপার হবেন?
আপনি যদি ব্লকচেইন ডেভেলপার হতে চান, তাহলে ধাপ গুলি মেনে চলতে হবে যেমন,
১. প্রোগ্রামিং শেখা
ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে কাজ করতে হলে প্রথমে কম্পিউটারের ভাষা অর্থাৎ প্রোগ্রামিং জানতে হবে। ব্লকচেইন তৈরির জন্য জনপ্রিয় কিছু ভাষা হলো JavaScript, Python, Solidity ইত্যাদি।
২. ব্লকচেইন সম্পর্কে জানা
ব্লকচেইন কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে হবে।
ব্লকচেইন কীভাবে কাজ করে?ব্লক ও চেইনের সম্পর্ক কী?ব্লকচেইনে ডাটা কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়? ইত্যাদি।
৩. স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট শেখা
স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট হলো একটি ডিজিটাল চুক্তি, যা নিজে থেকেই নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে কার্যকর হয়।
স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট তৈরির জন্য সলিডিটি (Solidity) ভাষা ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত এটি ইথেরিয়াম (Ethereum) ব্লকচেইনে ব্যবহৃত হয়।
৪. ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করা
ব্লক চেইন প্রোগ্রামার হবার পর ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করে প্রাকটিস করতে হবে যেমন,
একটি সাধারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করা
স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট বানানো
ব্লকচেইন ভিত্তিক একটি অ্যাপ (DApp) তৈরি করা।
সেন্ট্রালাইজড ও ডিসেন্ট্রালাইজড পার্থক্য? - Centralized VS Decentralize
Centralized
সেন্ট্রালাইজড সিস্টেম-এ সব কিছু এক ব্যক্তি বা একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখানে, সব তথ্য বা ডেটা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষিত থাকে, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণও ওই এক জায়গা থেকে হয়।
যেমন, ব্যাংক, গুগল বা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্ট্রালাইজড সিস্টেমের উদাহরণ। এই ব্যবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়, কিন্তু নিরাপত্তার ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ, যদি কেন্দ্রীয় সার্ভার বা একক জায়গায় কোনো সমস্যা বা হ্যাকিং হলে, তাহলে পুরো সিস্টেমই বিপদে পড়তে পারে।
Decentralize
ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে নিয়ন্ত্রণ বা ক্ষমতা এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকে না, বরং এটি অনেক মানুষের বা নোডের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে।
এতে তথ্য বা সম্পদ এক জায়গায় না থেকে অনেক জায়গায় ভাগ করা থাকে।
যেমন বিটকয়েন বা ব্লকচেইন সিস্টেমে, সমস্ত লেনদেন বা ডেটা বিভিন্ন কম্পিউটারে ছড়িয়ে থাকে, ফলে এটি নিরাপদ এবং হ্যাক করা কঠিন হয়।
এর ফলে, যদি কোনো এক জায়গায় সমস্যা হয়, পুরো সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায় না।
এই ব্যবস্থা মানুষের মধ্যে স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশি সুযোগ দেয়।
তবে, এটি পরিচালনা করা কিছুটা কঠিন হতে পারে কারণ অনেক পক্ষের সমন্বয় প্রয়োজন হয়।
ব্লক চেইন এর মূল উপাদান কী?
* ব্লক (Block)
* চেইন (Chain)
* ক্রিপ্টোগ্রাফি (Cryptography)
* বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization)
* কনসেনসাস মেকানিজম (Consensus Mechanism)
* নোড (Node)
ব্লকচেইন নোডের (Blockchain Node) মালিক কে?
ব্লকচেইন নোডের (Blockchain Node) কোনো একজন মালিক নেই। ব্লকচেইন একটি বিকেন্দ্রীকৃত (Decentralized) প্রযুক্তি, যার মানে এটি কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে নয়।
এটি এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে অনেক মানুষ একসাথে এটি পরিচালনা করতে পারে, কিন্তু কেউ একা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
ব্লকচেইন হ্যাক করা এত কঠিন কেন?
১. বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization)
ব্লকচেইন কোনো নির্দিষ্ট সার্ভারে রাখা হয় না। এটি অনেক কম্পিউটারে ভাগ করে সংরক্ষণ করা হয়। তাই, যদি একজন হ্যাকার একটি কম্পিউটার হ্যাক করেও ফেলে, তবুও সে পুরো ব্লকচেইনের তথ্য বদলাতে পারবে না।
২. শক্তিশালী নিরাপত্তা (Cryptography)
ব্লকচেইনের প্রতিটি লেনদেন বিশেষ এনক্রিপশন পদ্ধতির মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। এটি এমনভাবে গোপন করা হয় যে, সেটি ভেঙে ফেলা বা বদলানো প্রায় অসম্ভব।
৩. সম্মতির নিয়ম (Consensus Mechanism)
ব্লকচেইনে নতুন কোনো তথ্য যোগ করতে চাইলে, নেটওয়ার্কের বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীর অনুমতি লাগবে। মানে, একজন ব্যক্তি চাইলেই ব্লকচেইনের তথ্য বদলাতে পারবে না।
৪. অপরিবর্তনীয়তা (Immutability)
যদি কোনো তথ্য একবার ব্লকচেইনে যোগ হয়, সেটি আর পরিবর্তন করা যায় না। কারণ, প্রতিটি ব্লক পরের ব্লকের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যদি কেউ একটি ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে পরবর্তী সব ব্লকের তথ্যও পরিবর্তন করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব।
৫. সবার কপি থাকে (Distributed Ledger)
ব্লকচেইনের প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর কাছে একই ধরনের রেকর্ড বা হিসাব থাকে। যদি কেউ নিজের কপিটা বদলে ফেলার চেষ্টা করে, তাহলে অন্যদের কাছে থাকা সঠিক কপিগুলো সেটিকে ঠিক করে দেবে। ফলে, তথ্য পরিবর্তন করা যায় না।
ব্লক চেইন নোড এর কাজ কি?
নোডগুলো দেখে যে লেনদেনগুলো ঠিক আছে কিনা, মানে ব্লকচেইনের নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে কিনা।
অনেক নোড ব্লকচেইনের একটা কপি রাখে, মানে সব লেনদেনের ইতিহাস জমা রাখে।
নোডগুলো একে অপরের সাথে কথা বলে, যাতে ব্লকচেইন সবসময় আপডেট থাকে এবং সবার কাছে একই তথ্য থাকে।
যেহেতু অনেকগুলো নোড তথ্য যাচাই করে, তাই তথ্যকে পরিবর্তন করা অসম্ভব হয়ে পরে।
সবচেয়ে নিরাপদ ব্লকচেইন কোনটি?
১. বিটকয়েন (Bitcoin)
২. ইথেরিয়াম (Ethereum)
ব্লকচেইনে "Timestamp" বা সময়মোহর কি? ও এটির গুরুত্ব কি?
ব্লকচেইনে "Timestamp" বা সময়মোহর হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি। থেকে প্রতিটি লেনদেনের সঠিক সময় ও তারিখ জানা যায়।
এটি ঠিক যেমন কোনো অফিসের রেজিস্টারে তারিখসহ সময় লেখা হয়, তেমনি ব্লকচেইনেও প্রতিটি লেনদেনের সময় সূচী যুক্ত থাকে।
ব্লকচেইন থেকে কীভাবে টাকা আয় করা যায়?
ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনি বিভিন্নভাবে টাকা আয় করতে পারবেন।
যেমন,
১. ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে (Investing in Crypto currencies)
বিটকয়েন, ইথেরিয়াম মত অনেক ডিজিটাল মুদ্রা আছে, সেগুলো কিনে ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন।
২. ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং (Crypto currency Trading)
স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচা করে লাভ করা যায়। যেমন শেয়ার মার্কেটে হয়।
৩. মাইনিং (Crypto currency Mining)
মাইনিং হল ব্লকচেইনের লেনদেন যাচাই করার এক প্রক্রিয়া, যেখানে মাইনাররা নতুন কয়েন ও লেনদেন ফি পেয়ে থাকে।
৪. স্টেকিং ও ইয়িল্ড ফার্মিং (Staking and Yield Farming)
স্টেকিং: নির্দিষ্ট ব্লকচেইনে কয়েন রেখে নেটওয়ার্ককে নিরাপদ করতে সাহায্য করলে লাভ হিসাবে নতুন কয়েন পাওয়া যায়।
ইয়িল্ড ফার্মিং: DeFi (De centralized Finance) প্ল্যাটফর্মে কয়েন ধার দিয়ে বা ধার নিয়ে সুদ বা লাভ অর্জন করা যায়।
৫. ব্লকচেইন ডেভেলপমেন্ট (Block chain Development)
ব্লকচেইন প্রযুক্তি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে, তাই দক্ষ ডেভেলপারদের চাহিদা বেড়ে চলেছে।
স্মার্ট কন্ট্রাক্ট, dApps (ডিসেন্ট্রালাইজড অ্যাপ), ও ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিখে ভালো আয় করা যায়।
৬. NFT তৈরি ও বিক্রি (Creating and Selling NFTs)
NFT (Non-Fungible Token) হলো ডিজিটাল আর্ট, ভিডিও, মিউজিক, গেমের আইটেম ইত্যাদি
আপনি নিজের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে NFT হিসেবে বিক্রি করতে পারেন।
ব্লকচেইন ওয়ালেট কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
ব্লকচেইন ওয়ালেট হল একটি ডিজিটাল মানি ব্যাগ, যা আপনাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন: বিটকয়েন, ইথেরিয়াম ইত্যাদি) সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং লেনদেন করতে সাহায্য করে। এটি সাধারণ মানিব্যাগের মতোই, কিন্তু এখানে টাকা ডিজিটাল ফরম্যাটে থাকে।
ব্লকচেইন মাইনিং কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে? What is Block Chain Mining in Bengali
ব্লকচেইন মাইনিং হল একটি প্রক্রিয়া যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার করে নতুন ব্লক তৈরি করা হয় এবং লেনদেন যাচাই করা হয়।
এটি ব্লকচেইন নেটওয়ার্ককে নিরাপদ ও সচল রাখে।
সহজ ভাষায়, এটি এক ধরনের গণিতভিত্তিক প্রতিযোগিতা, যেখানে মাইনাররা অর্থাৎ কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা জটিল সমস্যার সমাধান করে ব্লক তৈরি করে এবং পুরস্কার হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি পায়।
ক্রিপ্টো গ্রাফিক্স কি? - What is Crypto Graphics in Bangla
ক্রিপ্টো গ্রাফিক্স হল ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এর দাম ও লেনদেনের তথ্য দেখানোর পদ্ধতি।
এটি আমাদের মত সাধারণ মানুষের বুঝতে সাহায্য করে যে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম কীভাবে ও কখন উঠছে-নামছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে।
সহজ ভাবে,ক্রিপ্টো গ্রাফিক্স হল এমন একটি চার্ট যা ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বুঝতে সাহায্য করে। এটি সঠিক সময়ে কেনাবেচা করার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
ব্লকচেইন বনাম ক্রিপ্টোকারেন্সি! - Block Chain VS Crypto Currency
ব্লকচেইন:
ব্লকচেইন হল একটি আধুনিক প্রযুক্তি যা তথ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষিত করার একটি পদ্ধতি।
এটি মূলত একটি ডিজিটাল খাতা যেখানে লেনদেন বা অন্যান্য তথ্য একবার যোগ হলে তা পরিবর্তন করা যায় না, ফলে এটি খুবই নির্ভরযোগ্য।
ব্লকচেইন শুধুমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য নয়, এটি ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা মতো অনেক ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়।
কিছু জনপ্রিয় ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম হল Hyperledger এবং Corda,।
ক্রিপ্টোকারেন্সি:
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা যা লেনদেনের জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে।
Bitcoin, Ethereum, এবং Dogecoin এর মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যাবহার করে অনলাইনে লেনদেন ও বিনিয়োগের জন্য ব্যাবহার হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন ছাড়া চলতে পারে না কারণ এর সমস্ত লেনদেন ব্লকচেইনের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়।
তাই ব্লকচেইন একটি বড় প্রযুক্তি, আর ক্রিপ্টোকারেন্সি তার একটি নির্দিষ্ট ব্যবহার।
কনসেনসাস মেকানিজম কী?
কনসেনসাস মেকানিজম হল একটা নিয়ম, যা ব্লকচেইনের সফটওয়্যারে লেখা থাকে।
এটি নির্ধারণ করে যে ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে কোন তথ্য সঠিক এবং কোনটা ভুল।
এটি এমন এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সমস্ত কম্পিউটার (নোড) একমত হয়, যাতে নেটওয়ার্ক নিরাপদ এবং বিশ্বাসযোগ্য ভাবে কাজ করে।
সহজ কথায় সংক্ষেপে, কনসেনসাস মেকানিজম হল ব্লকচেইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, যা নিশ্চিত করে যে লেনদেনের সব তথ্য যেন সবাই একই পায় এবং কোনো প্রকার ধোঁকাবাজি যেনো না হয়।
স্টেকিং (Staking) এবং ইল্ড ফার্মিং (Yield Farming) কি?
স্টেকিং (Staking):
স্টেকিং হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা রেখে লাভ করার একটি পদ্ধতি।
এটি অনেকটা ব্যাংকে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করার মতো, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা রাখলে সুদ পাওয়া যায়।
যেসব ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক প্রুফ-অব-স্টেক (PoS) উদাহরণ হিসেবে, যদি কারও কাছে ইথেরিয়াম থাকে, সে চাইলে সেটি স্টেকিং করতে পারে এবং এর বিনিময়ে নতুন কয়েন লাভ করতে পারে।
ইল্ড ফার্মিং (Yield Farming):
ইল্ড ফার্মিং হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি ধার দিয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের একটি উপায়।
এটি অনেকটা ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ পাওয়ার চেয়ে বেশি লাভজনক, তবে ঝুঁকিও বেশি থাকে। এখানে ব্যবহারকারী তার ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশেষ প্ল্যাটফর্মে জমা রাখে, যেখানে অন্যরা তা ধার নিতে পারে।
এর বিনিময়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে সুদ বা নতুন টোকেন পাওয়া যায়।
উদাহরণ হিসেবে, কেউ যদি ইথেরিয়াম এবং ইউএসডিসি জমা রাখে, তাহলে সে লেনদেন ফি বা নতুন টোকেন লাভ করতে পারে।
এটি অনেকটা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার মতো, যেখানে লাভ এবং ক্ষতির সম্ভাবনা দুটোই থাকে।
সহজ কথায়,
স্টেকিং: ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা রেখে সুদ পাওয়া।
ইল্ড ফার্মিং: ক্রিপ্টোকারেন্সি ধার দিয়ে বেশি লাভ করা।
লেজার (Ledger) কী?
লেজার হল এক ধরনের খাতা বা রেকর্ড বুক, যেখানে সব রকমের লেনদেন (ট্রানজাকশন) লেখা থাকে। এটি কাগজে হতে পারে বা ডিজিটাল আকারেও থাকতে পারে।
সহজ কথায়,লেজার মানে একটা হিসাবের খাতা, যেখানে সব লেনদেন পরিষ্কারভাবে লেখা থাকে, যাতে কেউ ভুল করতে না পারে বা প্রতারণা করতে না পারে।
ড্যাপস (DApps) এবং স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (Smart Contracts) কি?
স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (Smart Contracts):
* স্মার্ট কন্ট্রাক্ট হলো এক ধরনের ডিজিটাল চুক্তি, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর তৈরি করা হয়।
* এটি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মতো, যেখানে চুক্তির শর্তগুলো কোড আকারে লেখা থাকে।
* যখন চুক্তিতে উল্লিখিত শর্তগুলো পূরণ হয়, তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যায়।
* উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কাউকে ক্রিপ্টোকারেন্সি পাঠান, এবং শর্ত থাকে যে প্রাপক একটি নির্দিষ্ট কাজ করলে তবেই তার কাছে সেই ক্রিপ্টোকারেন্সি যাবে, তাহলে স্মার্ট কন্ট্রাক্ট সেই শর্ত পূরণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেনটি সম্পন্ন করবে।
* এর ফলে, মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন কমে যায় এবং লেনদেন আরও নিরাপদ ও স্বচ্ছ হয়।
স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (Smart Contract) এর সহজ উদাহরণ:
মনে করুন, আপনি আপনার বন্ধুকে একটি শর্তে টাকা ধার দিতে চান। শর্তটি হলো, "যদি বন্ধু আগামী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়, তবে কোনো সুদ লাগবে না। কিন্তু যদি দেরি করে, তবে ১০% সুদ দিতে হবে।"
এই শর্তটি যদি কোডের মাধ্যমে ব্লকচেইনে লেখা থাকে, তবে এটি একটি স্মার্ট কন্ট্রাক্ট।
* নির্ধারিত তারিখে বন্ধু টাকা ফেরত দিলে, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেনটি সম্পন্ন করবে (কোনো সুদ ছাড়াই)।
* দেরি হলে, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০% সুদ যোগ করে টাকা ফেরত নেবে।
* এখানে কোনো মধ্যস্থতাকারী (যেমন: ব্যাংক) এর প্রয়োজন নেই।
ড্যাপস (DApps):
ড্যাপস বা ডিসেন্ট্রালাইজড অ্যাপস (Decentralized Applications) হলো এমন অ্যাপ্লিকেশন, যা কেন্দ্রীয় সার্ভারের পরিবর্তে ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের উপর তৈরি করা হয়।
* এটি স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ করে।
* ড্যাপসের (DApps) ডেটা কোনো এক সংস্থার হাতে থাকে না, বরং এটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনেক গুলো কম্পিউটারে (নোড) ছড়িয়ে থাকে।
* এর ফলে, ড্যাপস আরও নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং সেন্সরশিপ প্রতিরোধী হয়।
* ড্যাপস অনেকটা সাধারণ মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েব অ্যাপের মতো, কিন্তু এর পেছনের প্রযুক্তিটি সম্পূর্ণ আলাদা।
ড্যাপস (DApp) এর সহজ উদাহরণ:
মনে করুন, একটি অনলাইন লটারি সিস্টেম আছে।
* এই লটারি সিস্টেমটি কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভারে না থেকে ব্লকচেইনের উপর তৈরি করা হয়েছে।
* লটারির টিকেট কেনা, ড্র করা, এবং বিজয়ীদের পুরষ্কার দেওয়া - এই সবকিছু স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়।
* কেউ এই সিস্টেমের ফলাফল পরিবর্তন করতে পারবে না, কারণ ডেটা ব্লকচেইনে সুরক্ষিত থাকে।
* এই লটারি সিস্টেমটি একটি ড্যাপস।
কিভাবে ব্লকচেইন শেখা হয়?
ব্লকচেইন শেখার জন্য কিছু ধাপ আছে যেমন,
প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে হবে
ব্লকচেইনের বেসিক ধারণা রাখতে হবে
ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম শিখতে হবে
স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট শিখতে হবে
ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করা শিখতে হবে
ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ?
একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ ফাংশন হল একটি গাণিতিক ফাংশন, যা কোনো "ইনপুট" বা "বার্তা" কে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট আকারের স্ট্রিং বা সংখ্যা তৈরি করে।
এই আউটপুটকে "হ্যাশ" বা "মেসেজ ডাইজেস্ট" বলা হয়।
হ্যাশ ফাংশন সাধারণত পাসওয়ার্ড সুরক্ষা, ব্লকচেইন, এবং ডাটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাবহার হয়।
আপনি চাইলে অনলাইনে SHA-256 Generator দিয়ে আপনার নিজের নাম বা যে কোনো শব্দের হ্যাশ দেখতে পারেন!
উপসংহার:
ব্লকচেইন একটি আধুনিক ও নিরাপদ প্রযুক্তি, যা তথ্য সংরক্ষণ ও লেনদেন সুরক্ষিত ভাবে করা হয়।এটি হ্যাক করা কঠিন, তাই খুবই নিরাপদ।এটি শুধু 'ক্রিপ্টোকারেন্সি'র জন্য নয়, বরং তথ্য সংরক্ষণ ও বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে আরও বেশি ক্ষেত্রে ব্লকচেইনের ব্যবহার হবে। তাই, ব্লকচেইন জানা ও ব্যবহার করা আমাদের জন্য উপকারী হবে।